সকল মাসের মধ্যে সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ মাস হল আমাদের এই পবিত্র রমজান মাস।
এই রোজার মাস হল রহমতের মাস বা বরকতের মাস,এই রোযার মাস মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবার মাস। এই মাস বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী পবিত্র আল কুরআন অবতীর্ণের মাস। এ মাস তাক্বওয়া অর্জনের মাস।এ মাস অর্থাৎ রোজার ফযিলত ও বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য রয়েছে ।
রোজার কিছু গুরূত্বপূর্ণ ফজিলত (rojar fojilot)
১.সিয়াম হল তাক্বওয়া তথা আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যম।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন-
হে মুমিনগণ!তোমাদের উপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে,যেমনি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর—যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।
২.রমজান মাসের সিয়াম ইসলামের পাঁচটি রূকনের একটি।
আব্দুল্লাহ বিন উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ-
ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ وَحَجِّ الْبَيْتِ
অর্থঃ-ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত- (১)এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্যিকার মাবুদ নেই,এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল (২)সালাত প্রতিষ্ঠা করা (৩)যাকাত প্রদান করা (৪)রমযান মাসে রোযা পালন করা এবং (৫)বাইতুল্লাহ তথা (কাবা ঘরের)হজ্জ করা।
৩.সিয়াম বা রোযা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই রাখা হয়,ফলে তার প্রতিদান স্বয়ং তিনিই দেন
যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হাদীসে কুদসীতে বলেন-
قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَامَ هُوَ لِى وَأَنَا أَجْزِى بِه مسلم
অর্থঃ-মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য,কিন্তু সিয়াম তার ব্যতিক্রম,তা শুধু আমার জন্য,আর আমিই তার প্রতিদান দেব।
৪.সিয়ামের সমমর্যাদা আর কোন আমল নেই।
আবু হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন বলেছিলেন-
يَا رَسُولَ اللهِ ، مُرْنِي بِعَمَلٍ قَالَ عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ ؛ فَإِنَّهُ لاَ مِثْلَ لَهُ السنن الكبرى للنسائي
অর্থঃ-হে রাসূলুল্লাহ ! আমাকে অতি উত্তম কোন নেক আমলের নির্দেশ দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:‘তুমি সিয়াম পালন কর। কারণ এর সমমর্যাদার আর কোন আমল নেই।
৫.সিয়াম পালনকারী বিনা হিসাবে প্রতিদান লাভ করেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন—কিন্তু সিয়ামের বিষয়টা ভিন্ন। কেননা সিয়াম শুধু আমার জন্য, ফলে আমিই তার প্রতিদান দেব।
কিন্তু অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী ও সৎ কর্মের প্রতিদান বিনা হিসাবে দেয়া হয় না। বরং প্রত্যেকটি নেক আমলের পরিবর্তে আমলকারীকে দশ গুণ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত প্রতিদান দেয়া হয়।
৬.সিয়াম কুপ্রবৃত্তি থেকে সুরক্ষা করে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
অর্থঃ-হে যুবকেরা !তোমাদের মাঝে যে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি-কে অবনত করে ও লজ্জাস্থানের সুরক্ষা দেয়। আর যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে না সে যেন সিয়াম পালন করে। কারণ এটা তার রক্ষা কবচ।
৭.সিয়াম হল ঢাল,ফলে তা সকল প্রকার অশ্লীলতা ও অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত রাখে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন -
রোজা হল ঢাল। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে সিয়াম বা রোজা পালন করবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। যদি তার সাথে কেউ ঝগড়া বিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায় তবে সে যেন বলে -আমি সিয়াম পালনকারী
৮.রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচারও ঢাল।
যেমন হাদীসে এসেছে -
রোযা হল ঢাল ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার মজবুত দুর্গ।
৯.শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একদিন রোজা পালন করলে, জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে থাকা যাবে।
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোযা পালন করবে আল্লাহ তার থেকে জাহান্নাম-কে এক খরিফ (সত্তুর বছরের)দুরত্বে সরিয়ে দেবেন।
১০.রোজা পালনকারীকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
যেমন হাদীসে এসেছে -
ইফতারের সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর এটা রমজানের প্রতি রাতে।
১১.রোযা বা সিয়াম হল জান্নাত লাভের পথ।
যেমন হাদীসে এসেছে -
আবু হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম,হে আল্লাহর রাসূল!আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যার দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি (অন্য বর্ণনায় রয়েছে,যার দ্বারা আমি জান্নাতে যেতে পারি)। তিনি বললেন -‘তুমি সিয়াম বা রোজা পালন কর। কেননা,এর সমকক্ষ আর কোন কাজ নেই
১২.সিয়াম বা রোযা পালনকারী “রাইয়্যান”নামক একটি দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে দরজা দিয়ে রোজা পালনকারীরা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করবে নাঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন -
জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রাইয়ান। কেয়ামতের দিন রোজা পালনকারীরাই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে,রোযা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। যখন তারা প্রবেশ করবে,দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।
১৩.রোজা পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও উত্তম।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
যার হাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর জীবন,সে সত্তার শপথ,সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ তাআলার কাছে মেশকের ঘ্রাণ হতেও প্রিয়।।
মুখের গন্ধ বলতে পেট খালি থাকার কারণে যে গন্ধ আসে সেটাকে বুঝায়। দাঁত অপরিষ্কার থাকার কারণে যে গন্ধ সেটা নয়।
১৪.রোজা পালন আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের মাধ্যম
যেমন হাদীসে এসেছে-
রোজা পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ-একটি হল ইফতারের সময় অন্যটি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়।
ইফতারের সময় আনন্দ হল,রোজা পূর্ণ করতে পারল ও খাবার-দাবারের অনুমতি পাওয়া গেল। অপর দিকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের যে আনন্দ,তা এখন অনুভব করতে না পারলেও কেয়ামতের দিন পারা যাবে। যখন সকল মানুষ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহমুখী থাকবে।
১৫.রোজা কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে।
হাদীসে এসেছে-
র্আব্দুল্লাহ বিন আমর(রাঃ)থেকে বর্ণিত,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :‘সিয়াম ও কুরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে প্রতিপালক! আমি দিনের বেলা তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। কুরআন বলবে হে প্রতিপালক !আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি,তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন,অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে।
১৬.রোজা হল গুনাহ মাফের কারণ ও গুনাহের কাফফারা।
যেমন হাদীসে এসেছে-
মানুষ যখন পরিবার-পরিজন,প্রতিবেশী ও ধন-সম্পদের কারণে গুনাহ করে ফেলে,তখন সালাত,সিয়াম,সদকা সে গুনাহগুলোকে মিটিয়ে দেয়।
১৭.বিশেষ করে ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশা রেখে রমজানের রোজা পালন করলে,জীবনের সমস্ত গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়।
হাদীসে এসেছে-
যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমান ও সওয়াবের আশা রেখে রোজা পালন করবে,তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
0 মন্তব্যসমূহ